Bangladesh National Flag

Bangladesh National Flag
green + blue

Sunday, March 6, 2016

জিয়া ও বিএনপি


১৯ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক শহীদ জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের এমনই একটি দিনে বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল, তখন কে জানত এ শিশু বড় হয়ে তার প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন, বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রপতি হবেন? বিশ্ব ইতিহাসে শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। শহীদ জিয়া বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধকে রূপদান করেছিলেন একটি সমন্বিত মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা থেকে শুরু করে বাংলাদেশী জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থান ও বিনির্মাণে তিনি কালজয়ী অবদান রেখে গেছেন। আত্মপরিচয়ের সংজ্ঞা নিয়ে আমরা যখন ছিলাম কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তখন ইতিহাসের যুক্তিসিদ্ধ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ নিয়ে তিনি জাতিকে দিয়েছেন সত্তার এক সুস্পষ্ট পরিচিতি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেউলিয়াপনায় সমাজে চলছিল অস্থিরতা, সৃষ্টি হয়েছিল বৈষম্য। সামন্ত সমাজের নকল নবাবীর পরিণতিতে আমরা দেখেছি একদলীয় শাসন, দুর্নীতি ও দুঃশাসন। জিয়াউর রহমান বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে বটবৃক্ষের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রের পাশে তালতরুর মতো শির উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যখন বিরোধী দলের ওপর সরকারি দলের দমন-নির্যাতন শুরু হয় তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে আদর্শবিহীন সুযোগসন্ধানীরা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত, আইনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত, জাতীয় জীবনে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা নির্বাসিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে জিয়ার সৈনিকদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে সুযোগসন্ধানীদের। জনগণকে সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে জিয়াউর রহমান রাজনীতিকে গ্রহণ করেছিলেন জীবনধারারূপে। তার কাছে- politics is not a profession or job, it is a way of life. এই দর্শন ও বিশ্বাসই তাকে নিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের কাছাকাছি। শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মপরিকল্পনাকে সামনে রেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি জিয়া বলতেন, ‘আদর্শের ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, তা না হলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাই সংগঠনে যারা থাকবেন, তাদেরকে পার্টির আদর্শ অবশ্যই জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং সেটা বিশ্বাস করতে হবে এবং সেই বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদেরকে আদর্শের চালনি দিয়ে এখন বেছে নিতে হবে আপনাদেরকে।’ জিয়া রাজনৈতিক ক্লাসে প্রায়ই বলতেন, ‘আমি না থাকতে পারি, প্রেসিডেন্ট কে হলো না হলো তাতে কিছু যায় আসে না এবং আপনি এমপি না থাকলে তাতেই বা কী হলো? কিন্তু এ দেশ এ জাতি থাকবে, চিরদিন থাকবে। এ জন্য চাই সিস্টেম। তাই আমরা পার্টিকে একটা সিস্টেমের মধ্যে দীর্ঘকাল চালাতে চাই।’ শহীদ জিয়ার বক্তব্যকে ধারণ করে সংগঠন গোছানোর সময় এসেছে। সুশিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী ছাড়া সংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকা যায় না। বিএনপি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সুতরাং তার একটা প্রডাক্ট আছে, আর তা হচ্ছে তার মতবাদ বা আদর্শ। এর গ্রাহক হচ্ছে তার সমর্থক বা ভোটাররা। দল বা প্রতিষ্ঠানের প্রডাক্ট বা মতবাদের গ্রাহক বাড়ানোর চাপ ও প্রত্যাশা আছে। বিএনপির রাজনীতিকে তার সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে হলে সৎ, আদর্শবান নেতৃত্ব দিয়ে দলকে সংগঠিত করতে হবে। গতানুগতিক রাজনীতি পরিহার করে একবিংশ শতাব্দীর ছাত্র ও যুবসমাজ, কৃষক-শ্রমিকের চাহিদামাফিক রাজনীতি ও সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ব্যাপক জনসচেতনতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আজ গণতন্ত্র রক্তাক্ত। সেই গণতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। জিয়ার প্রদর্শিত পথেই জনগণ বেগম জিয়ার পাশে রয়েছেন। চলমান সঙ্কটে তার সাথে বিদেশ থেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান। জাতীয় সঙ্কটে গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাদের প্রতি অবিচল আস্থা রাখার মধ্য দিয়েই জিয়ার আদর্শের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির একটি উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের নাম জিয়া। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে জাতীয় ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে তাকে এ পথে আসতে হয়েছিল। কিন্তু অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, এ জাতি তাকে হারিয়েছে এমন একসময়ে যখন তারই প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। জিয়া আজো বেঁচে আছেন তার কর্মের মাধ্যমে, গণতন্ত্রের দিশারীরূপে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় শহীদ জিয়ার সততা, অনন্যসাধারণ বক্তিত্ব ও ন্যায়বোধ জাতির মানসলোকে ধ্রুবতারার মতো ভাস্বর হয়ে আছে, থাকবে চিরদিন। শহীদ জিয়ার আদর্শকে সামনে রেখে দেশনেত্রী বেগম জিয়া বিএনপিকে সংগঠিত করে বিরাজমান সঙ্কটাবস্থা কাটিয়ে উঠবেন, এ দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে। শহীদ জিয়ার রৌদ্রকরোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতি অবশ্যই আমার দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যে দর্শন রেখে গেছেন, তা আনাগত দিনগুলোতে নতুন প্রজন্মের পাথেয়। See More: www.wonderbangla.blogspot.com

Monday, January 18, 2016

একজন জাতীয়তাবাদী সৈনিক জিয়া


এমাজউদ্দীন আহমদ : সত্যিই জিয়াউর রহমান আমৃত্যু একজন সৈনিক। সৈনিক হিসেবেই তিনি এই জাতির জীবনে সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন সময়ে আবির্ভূত হন। সৈনিক হিসেবেই তিনি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নেন। সৈনিক হিসেবেই তিনি শাহাদত বরণ করেন। সারা জীবন তিনি সৈনিক হয়ে রইলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রেই কাটালেন। তার জীবনে রণাঙ্গন বদলেছে। রণকৌশল পাল্টেছে। পাল্টেছে যুদ্ধাস্ত্রও। পাল্টায়নি শুধু তার সৈনিকজীবন। কোনো পরিবর্তন আসেনি বাংলাদেশ রাজনীতির ক্ষেত্রে তার সৈনিকসুলভ বলিষ্ঠ ভূমিকায়। এক অর্থে প্রত্যেকেই সৈনিক। জীবনটা যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধ করেই সবাইকে টিকে থাকতে হয়। যা কিছু গৌরবের তা অর্জন করতে হয়। এ অর্থে জিয়াউর রহমান সৈনিক নন। তিনি সৈনিক দেশকে ভালো বেসে, দেশের জন্য অর্থপূর্ণ কিছু করতে উদগ্র আকাঙ্খার জন্য। তিনি সৈনিক একজন সাচ্চা জাতীয়তাবাদী হিসেবে জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে নিশ্চিত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজনীতিকে তাদের মধ্যে টেনে আনার পক্ষে দুর্লক্সঘ বাধা-বিপত্তি অপসারণের জন্য। এদিক থেকে বিচার করলে বলা যায়, উন্নয়নশীল বিশ্বে দেশপ্রেমিক সব রাষ্ট্রনায়কই সৈনিক। জাতীয় অগ্রগতি অর্জনের জন্য প্রতি পদে পদে তাকে লড়তে হয়। লড়তে হয় কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে, তা দেশেরও হয়, হয় বিদেশেরও। সর্বক্ষণ তাকে যুদ্ধকালীন সতর্কতার এক পরিবেশের মধ্যে থাকতে হয়। সব প্রতিবন্ধকতাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে শত্রুর ওপর বিজয় অর্জনের কৌশল সদা তৈরি রাখতে হয়। লক্ষ্য অর্জনে সর্বাধিক স্বল্প ব্যয়ে যেন তা সম্ভব হয় সে সম্পর্কেও তিনি সদাজাগ্রত। এ অর্থেও জিয়াউর রহমান একজন সৈনিক এবং বলতে কোনো দ্বিধা নেই, তিনি ছিলেন এক সফল সৈনিক। শ্রেষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধাদের একজন তিনি। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের প্রধান সেনাপতি। জনস্বার্থের অতন্দ্র প্রহরী। তার যুদ্ধক্ষেত্র শুধু মুক্তিযুদ্ধের মহান ক্ষেত্রেই সীমিত নয়, তা সম্প্রসারিত ছিল মাঠে-ঘাটে, কৃষকদের দোরগোড়ায়, শ্রমিকের কারখানার প্রান্তে, দেশের তরুণদের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করার লক্ষ্যে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে পল্লী উন্নয়ন ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন চত্বরে। খ্যাতনামা নাট্যকার হেনরিক ইবসেন তার অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটকে (An Enemy of the people) লিখেছেন, ‘একটি রাজনৈতিক সম্প্রদায় একটি জাহাজের মতো। এই জাহাজ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রত্যেককে তৈরি হওয়া উচিত’ (A community is like a ship; everyone ought to be prepared to take the helm.)| সত্যিই তো, পরিচালনার দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্রীয় জাহাজের প্রত্যেক যাত্রীকেই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রত্যেককেই নাবিকের ভূমিকা পালনের জন্য তৈরি হতে হয়। এই তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মহান শিক্ষা। অংশগ্রহণকারী নাগরিক (তথা পারটিসিপেন্ট সিটিজেন) হিসেবে প্রত্যেককে গড়ে উঠতে হবে। তা না হলে, এ ব্যবস্থা সার্থক হবে না। স্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র্য অর্থপূর্ণ হবে না। গণ-অধিকার হারাবে তার মর্মবাণী। মুক্তিযুদ্ধের অনলকু- থেকে প্রাণ পাওয়া বাংলাদেশে জনগণের জীবনে আসবে না পরিবর্তনের কোনো ছাপ। লাগবে না অগ্রগতির বিন্দুমাত্র ছোপ। কিন্তু এই পরিবর্তন তো আপনা-আপনি আসবে না। অনগ্রসর তৃতীয় বিশ্বে গণ-অধিকারের প্রত্যয় তো এমনিতেই আসেনি। সব ক্ষেত্রে এ জন্য প্রয়োজন হয়েছে একজন যুগদর্শীর। একজন জননেতার। একজন সৈনিকের বাংলাদেশে এই যুগদর্শী হলেন জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রধান সেনাপতি জিয়াউর রহমান। তারই সার্থক নেতৃত্বের পরশমণির স্পর্শ গ্রাম-বাংলার কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি করে এই পরিবর্তনের মৃদু তরঙ্গ। নতুনভাবে জনগণকে ভাবিয়ে তোলে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের ভূমিকা সম্পর্কে। তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে। এর মূল নিহিত জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির অভ্যন্তরে। গ্রাম-বাংলাকেই তিনি চিহ্নিত করেছিলেন তার মূল কর্মক্ষেত্ররূপে। লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন যুগ যুগ ধরে উপেক্ষিত গ্রামীণ জনসাধারণকে। সূচনা করেছিলেন শেকড়স্পর্শী উন্নয়ন কর্মকা-ের। তিনি সঠিকভাবে অনুধাবন করেন, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সনাতন জীবনব্যবস্থায় অভ্যস্ত মানুষকে নতুন পৃথিবীতে টেনে আনতে হলে শাসনব্যবস্থায় তাদের সক্রিয় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি পল্লী অঞ্চলকে প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্যে রূপান্তরিত করেন। এ দেশের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম গ্রামবাসীর নিজস্ব সরকার- গ্রামসরকার সৃষ্টি করেন যেখানে নিজেদের মতো করে গ্রামপর্যায়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা তারা করতে পারেন। গ্রামপর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম এ দেশের গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বা ভিডিপি গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেন। গ্রামাঞ্চলে যুবশক্তিকে বিভিন্ন অর্থপূর্ণ কাজে লাগানোর জন্য যুব-কো-অপারেটিভ কমপ্লেক্সের ব্যবস্থা করেন। পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পল্লী এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম গ্রামীণ সেচব্যবস্থা, মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য এবং বয়স্ক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। ১৯৭৬-৭৭ সালে গৃহীত পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-১-এর মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ের উন্নয়ন কর্মসূচি, ১৯৭৭-৭৯ সালে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর মাধ্যমে বৃহত্তর পাবনার ৭২ কোটি টাকা কর্মসূচি এবং ১৯৭৮-৭৯ সালে নোয়াখালী সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির সাফল্য এ ক্ষেত্রে নতুন দিগদর্শন। ১৯৭৮ সালে গৃহীত দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব লক্ষ্য চিহ্নিত হয় সে দিকে দৃষ্টি দিলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল উন্নয়নের হার বাড়ানো, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে পরনির্ভরশীলতা কমানো, সম্পদের সুষম বণ্টন, জনসংখ্যা বাড়ার হার কমিয়ে আনা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, নিরক্ষরতা দূর করা এবং রফতানি আয় বাড়ানোর মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন। দেশকে স্বনির্ভর ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়নে কৃষকদের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনিই স্বল্পমেয়াদি ঋণদানের ব্যবস্থা চালু করেন। এ ক্ষেত্রে ১৯৭৭ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে কৃষকদের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ১০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ বিতরণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। শুধু প্রকল্প প্রণয়ন এবং আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তার উদ্যোগকে সীমিত না রেখে পল্লী অঞ্চলের মানুষের অবস্থা সরাসরি দেখার জন্য তিনি গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে ছুটে গেছেন। কথা বলেছেন কৃষকদের সাথে, জেলে-মুটে মজুরদের সাথে। প্রত্যেকের মনে জাগ্রত করেছেন একধরনের অদম্য স্পৃহা। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নতুন উন্মাদনা। এমনি এক ঘটনার বিবরণ দিয়ে এ কে এম শামসুল বারী মিয়া মোহন লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট জিয়া এক সভাশেষে ফেরার সময় হঠাৎ ওই কৃষকের বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়েন। বাড়ির মহিলাকে বলেন, ‘আমাকে বসতে দিন’। মোড়ায় বসে তিনি বলেন, ‘মা আমাকে কি খেতে দেবেন?’ মহিলা তো আর তাকে চেনে না। তাই বলল, ‘কী খাবেন আপনি?’ তিনি বললেন, ‘পেঁপে খাবো।’ মহিলা বলল, ‘পেঁপে তো নেই আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘তবে কী আছে? কলা, লেবু ডাব?’ মহিলাটি বলল, ‘তা-ও নেই।’ ‘তবে দুধ আছে তো? তাই দিন’। জিয়া বলেন, ‘একটা ছাগল তো পালতে পারেন। আর লেবুগাছ, কলাগাছ, পেঁপেগাছ লাগানো তো সহজ। এ জন্য বেশি জায়গাও লাগে না। এসব লাগাবেন, আমি আবার আসব মেহমান হয়ে, কেমন?’ এরই মধ্যে বাড়ির মালিক এবং অন্য সব লোক এসে হাজির হলো। লোকটি বলেছিল, ‘বাবা আমি লেবুগাছ, পেঁপেগাছ, কলাগাছ লাগিয়ে, ছাগল কিনে আপনার জন্য অপেক্ষা করব।’ এভাবে জিয়াউর রহমান গ্রাম-বাংলায় সৃষ্টি করেছিলেন জাগরণের নতুন স্পন্দন। খাল কাটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গ্রাম-বাংলার লাখো মানুষকে তিনি সম্পৃক্ত করেছিলেন সামগ্রিক কার্যকলাপে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ জনসাধারণের মধ্যে জাগিয়েছিলেন নতুনভাবে ভাগ্য গড়ার প্রত্যাশা। পরিকল্পিত পরিবারব্যবস্থার শুভসূচনা করে বলিষ্ঠ জীবনবোধে সংযোজন করেন নতুন অধ্যায়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অপচয়প্রবণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজতন্ত্রকে পাল্টে, বেসরকারি উদ্যোগকে প্রাণবন্ত করে, বিশেষ করে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়িয়ে এবং রফতানি বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতিকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়ে যে দিকনির্দেশনা দান করেন আজ তা বিকশিত হয়েছে ফুলে-ফলে। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হলো? কিভাবে একজন পেশাদার সৈনিক জাতি গঠনের সৈনিকে রূপান্তরিত হলেন? এমন রূপান্তরের কারণের দিকে না তাকিয়ে শুধু ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দিলেও এমন দৃষ্টান্ত মেলে অনেক। ‘ইউরোপের অসুস্থ মানুষ।’ (সিক-মেন অব ইউরোপ) রূপে নিন্দিত, নিগৃহীত এবং প“লিত তুরস্কের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হয়েছিল কামাল আতাতুর্কের ভগ্নস্তুপ থেকে মিসরের উত্থানের জন্য প্রয়োজন হয়েছিল গামাল নাসেরের। চতুর্থ রিপাবলিকের জন্য প্রয়োজন হয়েছিল ফ্রান্সকে আলোয় টেনে আনার জন্য জেনারেল দ্য গলের। তার প্রয়োজনীয়তার কথা ফরাসি জাতি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করে। লিবিয়াকে আধুনিকতার আলোয় আনার কৃতিত্ব কর্নেল গাদ্দাফির একার। ঘানা যে আজ বিশ্বরাজনীতির ক্ষেত্রে পরিচিত হয়েছে তার মূলে রয়েছে এন ক্রুমার অবদান। জিয়ার সাথে এসব নেতার আত্মিক সম্পর্ক। সবাই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর দেশপ্রেমিক। সবাই ছিলেন এক নম্বরের জাতীয়তাবাদী। সবারই চিন্তাভাবনায় প্রতিফলিত হয়েছে জাতীয় শ্রীবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, জাতীয় সংস্কৃতির অনস্বীকার্য স্বাতন্ত্র্য, জাতীয় রাজনীতির স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্য। সবাই চেয়েছেন জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে সমগ্র জাতির, বিশেষ করে পল্লীবাসীর, কৃষক-শ্রমিক ও জনসমষ্টির অবহেলিতদের অংশ নেয়া। সবারই চোখে একই আলো- ‘আমার দেশ, আমার জাতি কোনো দিন কারো কাছে মাথা নত করবে না। ভিক্ষার হাত কারো কাছে প্রসারিত করবে না।’ প্রত্যেকেই চেয়েছেন, রাজনীতি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অথবা সংগ্রামে পরিণত না হয়ে হোক জনকল্যাণ অর্জনের সুষ্ঠু মাধ্যম। প্রত্যেকে তাই এখনো বেঁচে রয়েছে জাতীয় চেতনায়, জাতির শ্রেষ্ঠতম সন্তানদের অন্যতম হয়ে। কে তাদের ভুলতে পারে? কার সাধ্য ভোলে জিয়াকে? প্রত্যেকে চেয়েছেন জাতিকে স্বয়ম্ভর করে গড়ে তুলতে যেন নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যের মর্যাদা ভুলে গিয়ে অন্যের ওপর নির্ভর করতে না হয়। হেনরিক ইবসেনের কথা, এসব জাতীয় সৈনিক বিশ্বাস করতেন যে, ‘যে সংসার ঋণের ওপর নির্ভরশীল সেখানে থাকতে পারে না কোনো স্বাধীনতা, থাকে না কোনো সৌন্দর্য (There can be no freedom or beauty about a home life that depends on borrowing or debt!- A Doll’s House, Act-I’). লেখক : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Saturday, January 16, 2016

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি।

================================= ★জিয়াউর রহমান। ডাক নাম: কমল। জন্মঃ ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। কোন বোন নেই। পিতামহ: মৌলভী কামাল উদ্দীন। পিতামহী মিসিরন নেসা। মাতামহ: জলপাইগুড়ির বিখ্যাত ‘টি ফ্যামিলি’র জনাব আবুল কাশেম। মাতামহী: রহিমা খাতুন। বাবা: জনাব মনসুর রহমান। মা: জাহানারা খাতুন ওরফে রাণী। সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে জনাব মনসুর রহমান ছিলেন মৌলভী কামাল উদ্দীন-এর পঞ্চম পুত্র। ★স্থায়ী নিবাস বগুড়া জেলার বাগবাড়ি গ্রাম। জনাব মনসুর রহমান ছিলেন একজন কেমিষ্ট। ১৯৪৭ সালের আগে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচীতে চাকরি উপলক্ষে বাস করেন। মা জাহানারা খাতুন ওরফে রাণী ছিলেন একাšভাবে একজন গৃহিণী। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সঙ্গীত শিল্পী। প্রধানত গাইতেন নজরুল সঙ্গীত। করাচী বেতারে এক সময় প্রায় নিয়মিত সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠান করতেন। বাবা-মা দুজনেই পরলোকগত। ★জিয়াউর রহমানের স্কুল জীবন শুরু হয় কলকাতায় ‘হেয়ার স্কুলে’। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্রায় দু’বছর বগুড়ার গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করেন। ছাত্রজীবনে তাঁর ইচ্ছা ছিল ভবিষ্যতে ডাক্তার হবেন। ১৯৫২ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন ‘করাচী একাডেমী স্কুল’ (বর্তমানে তাইয়েব আলী আলভী একাডেমী) থেকে। ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই তিনি এই স্কুলে ভর্তি হন। ম্যাট্রিক পাশের পর তিনি ভর্তি হন করাচীর ‘ডি,জে কলেজে’। ১৯৫৩ সালে ‘পাকি¯ান সামরিক একাডেমী’তে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে তিনি ‘কমান্ডো ট্রেনিং’ও লাভ করেন। এছাড়া, তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ প্যারাট্রূপার। বিদেশে তিনি উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ★১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমান বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম খালেদা খানম। ডাক নাম পুতুল। জিয়া’র দুই সন্তান। দু’টোই ছেলে। নাম তারেক রহমান, ডাক নাম পিনো এবং আরাফাত রহমান, ডাক নাম কোকো। ★১৯৬৩ সাল থেকে বেশ কয়েক মাস তিনি চাকরি করেন ডিএফআই অর্থাৎ ‘সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে’।১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি ছিলেন ‘খেমকারান’ রণাঙ্গনের ‘বেদিয়ান’-এ যুদ্ধরত ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’-এর একটি ব্যাট্যালিয়নের কো¤ক্সানি কমান্ডার। তাঁর কো¤ক্সানির নাম ছিল ‘আলফা কো¤ক্সানি’। এই ব্যাট্যালিয়ন এবং জিয়া’র আলফা কো¤ক্সানি যুদ্ধে প্রচুর বীরত্ব দেখায়। অর্জন করে প্রভত সুনাম। একজন বীর, বুদ্ধিমান ও অমিততেজী সেনানায়ক হিসেবে জিয়া সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এই ব্যাট্যালিয়ন পুরস্কার লাভ করেছিল পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক বীরত্ব পদক। ব্যাট্যালিয়নের পুরস্কার বিজয়ী কো¤ক্সানি ছিল জিয়া’র আলফা কো¤ক্সানি। ★১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি ‘পাকিস্তান সামরিক একাডেমী’তে একজন প্রশিক্ষকের দায়িত্ব লাভ করেন। ★১৯৬৯ সালের এপ্রিলে জিয়াউর রহমান ঢাকার অদরে জয়দেবপুর সাব-ক্যান্টনমেন্টে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাট্যালিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্যে তিনি চার মাসের মেয়াদে পশ্চিম জার্মানী যান। ★১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে জিয়াউর রহমানকে চট্রগ্রামে বদলী করা হয়। নিযুক্ত হন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাট্যালিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। এই অষ্টম ব্যাট্যালিয়ন ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তরুণতম ব্যাট্যালিয়ন। চট্টগ্রামে জিয়া ব্যস্ত ছিলেন এই ব্যাট্যালিয়নকে গড়ে তোলার কাজে। এর ঘাঁটি ছিল ষোলশহর বাজারে। ★১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতের পর তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও বিডিআর-এর জোয়ানরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ২৬/২৭ মার্চ কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং সেন্টার থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান প্রথমে ১নং সেক্টর কমান্ডার এবং পরে ছিলেন “জেড ফোর্স”-এর অধিনায়ক। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর নিযুক্ত হন কুমিল্লার ব্রিগেড কমান্ডার। ১৯৭২ সালের জুন মাসে নিযুক্ত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ-অব-স্টাফ। ★১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর্যায়ে সে বছর ২৫ আগস্ট তাকে সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে স্বল্পস্থায়ী অভ্যুত্থানের সময় জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। বঙ্গভবনে গৃহবন্দি করে রাখা হয় প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদকে। এ পর্যায়ে বিচারপতি সায়েমের কাছে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার হস্তান্তর করে খন্দকার মোশতাক আহমদ পদত্যাগ করেন। ৭ নভেম্বর ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানকারীরা পরাভূত হয়, খালেদ ও তার কয়েকজন সঙ্গী নিহত হন; দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়, বন্দিত্ব থেকে মুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমানকে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। ★১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর ৪০ দিন পর অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’-এর মাধ্যমে আস্থা ভোট। শতকরা ৯৯ ভাগ ‘হ্যাঁ’ভোট তিনি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩ জুনে বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের ঐক্যমোর্চা “গণতাšিক ঐক্যজোট” (গজ)-এর মনোনীত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এম এ জি ওসমানী। জিয়া’র কাছে তিনি এক কোটি দশ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ★প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাঁর অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় “জাতীয়তাবাদী গণতাšিক দল” (জাগদল)। পরে আরও কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় “জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট”। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিভিন্ন দলের মোর্চা এই ফ্রন্ট “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল” নামে একটি একক রাজনৈতিক দল হিসেবে আতœপ্রকাশ করে। জিয়াউর রহমান নির্বাচিত হন দলের চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি বা ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে রায় গ্রহণ ছিল বিএনপি-র একটি অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি-র পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে ১৯ দফা কর্মসচি পেশ করেন। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপযোগী পরিবর্তন এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া তাঁর ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসচির প্রেক্ষাপটে দেশে “শাšিপর্ণ বিপ্লবের” ডাক দেন এবং পর্যায়ক্রমে বিপ্লবের কর্মসচি বা¯বায়ন শুরু করেন। ★আন্তর্জাতিক দরবারে বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক আসনে সমাসীন করা এবং তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকাকে অর্থবহ করে তোলার জন্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিরলস ও অভূতপর্ব ভূমিকা পালন করে গেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি লন্ডন ও লুসাকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ রাষ্ট্রপ্রধানদের আঞ্চলিক সম্মেলন; কলম্বোয় অনুষ্ঠিত জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলন, মক্কায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনসহ বিভিন্ন সম্মেলনে যোগ দেন এবং গুরুত্বপর্ণ কার্যকর অবদান রাখেন। পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশে তিনি রাষ্ট্রীয় সফর করেন। ১৯৮০ সালে জাতিসংঘের বিশেষ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন। ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে তৃতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে তিন সদস্য বিশিষ্ট “আল-কুদ্স” কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ইরাক-ইরান যুদ্ধাবসানের উদ্দেশ্যে গঠিত নয় সদস্যবিশিষ্ট ইসলামী শাšি মিশনের তিনি ছিলেন গুরুত্বপর্ণ সদস্য। মিশনের কাজে তিনি এককভাবেও ইরাক ও ইরান সফর করেন। ১৯৮১ সালের ২৯ মে দিবাগত রাতে ৩০ মে সোবেহেসাদেকের আগে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কুচক্রীর হাতে তিনি নিহত হন।. Powered by: sharebyblog

Saturday, January 9, 2016

হজে যেতে পারবেন আরো বেশি হজযাত্রী


গত বছরের চেয়ে এবার আরো ১৪ হাজার বেশি হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যাপক মতিউর রহমান। আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমতির জন্য প্রস্তুত করা হজ প্যাকেজ সম্পর্কে শনিবারে তিনি গণমাধ্যমেকে একথা জানান। তবে এবার হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের গতবারের চেয়ে পাঁচ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। অনলাইনে আবেদন করে আগামী ৩০ মের মধ্যে যাবতীয় অর্থ জমা দিতে হবে। ধর্মমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইন রেজিস্ট্রেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারক করা হচ্ছে, আমি নজরদারি রাখছি। গতবার হজ ভালো হইছে। শেষেও পাঁচ হাজার হাজি নিতে পারছি, এজন্য লোক উৎসাহিত হইয়া এবার লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাইছে।’ ধর্মমন্ত্রী জানান, চলতি বছর এক লাখ ১৩ হাজার ৮৬৮ হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে পারবেন পাঁচ হাজার। আর বাকি এক লাখ আট হাজার ৮৬৮ জন যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। তিন লাখ ৬০ হাজার টাকায় প্যাকেজ-১ ও তিন লাখ পাঁচ হাজার টাকায় প্যাকেজ-২ এর আওতায় হজে যাওয়া যাবে। এ ছাড়া মোয়াল্লেম ফি ২৪ হাজার টাকাসহ, ক্যাটারিং সার্ভিস থাকছে সৌদি আরবের নিয়মে- যোগ করেন ধর্মমন্ত্রী। বিশৃঙ্খলা এড়াতে মন্ত্রণালয় সেল এসব বিষয়ে কাজ করবে বলে জানান ধর্মমন্ত্রী। আর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, মোট হজযাত্রী পৃথকভাবে সমসংখ্যায় পরিবহন করবে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনস। গতবারের মতো এবারও থার্ড ক্যারিয়ার থাকছে না, জানিয়ে বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানভাড়া গতবারের মতো অপরিবর্তিত থাকছে। আমরা এক হাজার ৫০০ ডলার রাখছি। বাকিটা পাঠিয়ে দিয়েছি, সৌদি সরকার তাদের যে এয়ারলাইনসের চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে, ল্যান্ডিং চার্জ বাড়িয়েছে সেগুলো তো হিসাবের মধ্যে আনতে হচ্ছে। থার্ড ক্যারিয়ারের কোনো সম্ভাবনা নেই। ‘ এ ছাড়া ফ্লাইট শিডিউল ঠিকসহ প্রস্তুতির কাজটিও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ই করবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।